শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩৩ অপরাহ্ন

আপডেট
“অভিভাবকহীন সন্তানদের থেকে রাষ্ট্রও যেন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে

“অভিভাবকহীন সন্তানদের থেকে রাষ্ট্রও যেন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে

সাঈদুর রহমান রিমন : বৈষম্যের মাধ্যমে সৃষ্ট বঞ্চনা, নিপীড়নের ‘কোটা বিরোধী’ যৌক্তিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নেমেছে লাখ লাখ শিক্ষার্থী। তারা আমাদেরই সন্তান। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে রাষ্ট্র আরোপিত অন্যায্যতার প্রতিবাদ জানাচ্ছে। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তায় দিশেহারা শিক্ষার্থীরা বৈষম্য বিরোধী যে আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করেছে সেখানে তারা অভিভাবকহীন। মিছিলের স্লোগান কী হওয়া উচিত- তা ঠিক করে দেয়ার মতো পরামর্শকও নেই তাদের।

সে আন্দোলনে কোনো রাজনৈতিক ছায়া নেই, ভিনদেশি চক্রান্তেরও কোনো ছোঁয়া পড়েনি। সরকার, রাষ্ট্র, মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করা তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য নয়। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কেউ নেতা হয়ে উঠছে না, রাষ্ট্র ক্ষমতায় ভাগ বসানোরও কেউ নেই। ন্যায্যতা প্রাপ্তির আর্তিকে স্লোগানে রুপ দিয়ে তারা রাস্তায় দাঁড়িয়েছে। বঞ্চিতরা বিনয়ে গদগদ হওয়ার পরিবর্তে হয়তো কথা বলছে প্রতিবাদী ভাষায়। এসব আন্দোলন, সংগ্রাম, বিক্ষোভ-প্রতিবাদ তো বাঙালিদের বীরত্বগাঁথা ঐতিহ্যেরই অংশ।

তা সত্তেও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অহিংস আন্দোলনে সশস্ত্র প্রতিরোধের নৃশংসতা কেন? কেন ছাত্র-ছাত্রীদের রক্তে রঞ্জিত হবে ক্যাম্পাস থেকে রাজপথ? অতি সাধারণ দাবির কারণে কেন বইতে হবে লাশের ওজন? কেনইবা রাজাকারের ঘৃণ্য তকমা তাদের ললাটে এঁকে দিতে হবে? আন্দোলন সংগ্রামের জ্বলন্ত অগ্নিশীখা থেকে জন্ম নেওয়া ঐতিহ্য গৌরবের ছাত্রলীগ হঠাত শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি দাঁড়ালো কেন সে হিসেব অনেকেই মেলাতে পারছেন না। কোটা বিরোধী চলমান আন্দোলন নিশ্চিহ্ন করতে ছাত্রলীগকে যে কোনো পর্যায়ের বর্বরতা চালানোর নির্দেশটা এলো কোত্থেকে?

আদালতের সিদ্ধান্তেই কোটা’র ভাগ্য নির্ধারন হোক কিংবা সে বিষয়ে সরকারের বিশেষ সহমর্মিতা থাকুক না থাকুক- সেই ব্যাপারে আমার মতামত প্রকাশে মোটেও উৎসাহ নেই আমার। তবে শান্তিপূর্ণ একটি আন্দোলনে দমন পীড়ন চালিয়ে ক্ষোভ আর ঘৃণার পাহাড় সৃষ্টির বিপক্ষে আমি। উন্নয়ন জোয়ারের দাবিদার দেশটিতে এহেন অপকর্মের খুবই কী দরকার ছিল? একক জনপ্রিয়তার একতরফা শাসন ব্যবস্থায় বোবা-বধিরে রুপান্তরিত কোটি কোটি অভিভাবক জীবদ্দশাতেই নিজ সন্তানদের অসহায়ত্ব দেখতে পাচ্ছেন। দেখছেন, এ সন্তানদের পাশে কেউ দাঁড়াচ্ছে না। সচেতন দাবিদার পন্ডিতবর্গ, সুশীল সমাজ, সিনিয়র সিটিজেন কিংবা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী সম্মানীত নাগরিক, গর্বের প্রতীক- কেউ তাদের পাশে যায়নি, কেউ-ই না। অভিভাবকহীন লাখ কোটি সন্তানদের থেকে রাষ্ট্রও যেন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে… লেখক- সিনিয়র সাংবাদিক

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |